ভোলার মনপুরার ৫০ টাকার ডাব ঢাকায় এসে ১৫০ টাকা!

সারাদেশে তাপদাহে ডাবের চাহিদা বেড়েছে। ভোলার ডাবের চাহিদা সবসময়ই বেশি। কমদামে কৃষকদের কাছ থেকে পাইকাররা ডাব কিনলেও ঢাকার বাজারে বিক্রি করেন উচ্চ মূল্যে। তাই কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ভোলার মনপুরায় স্থানীয় ৬০-৭০ জন পাইকার রয়েছেন যারা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ডাব কেনেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট, মনপুরা, দক্ষিণ সাচুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া ও কলাতলির চরে ঘুরে বেড়ান তারা। ডাবের দর-দাম করে কিছু টাকা বায়না করে যান তারা। পরের দিন সকাল ৬টা থেকে ওই ডাব গাছ থেকে কাটতে থাকেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাটেন। পরে অটোরিকশা ও ভ্যানে করে নিয়ে যান যার যার গোডাউনে। সেখান থেকে ওই দিনই লঞ্চে পাঠিয়ে দেন ঢাকার পাইকারি আড়তে।
মনপুরার কৃষক কামাল হোসেন জানান, ডাব বিক্রি ভালো টাকা আয় হয়। এই আয় দিয়ে কয়েকটা গরু কিনেছেন।
ডাবের দামের বিষয়ে জানা যায়, মনপুরার ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে ডাব ক্রয় করে ঢাকার পাইকারি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে। ব্যাপারীরা তাদের ৩০ টাকা থেকে দামাদামি শুরু করে বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ৫৫-৬০ টাকা ওঠে। গাছ থেকে ডাব ব্যাপারীর লোকজন এসে ডাব পেড়ে নেয়। অথচ ওই ডাব বাজারে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
মনপুরার ডাবের পাইকারি ব্যাপারী জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে মনপুরা থেকে ডাব কিনে ঢাকায় পাইকারি আড়তে বিক্রির করে আসছেন। প্রতি বছর চৈত্র মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত মনপুরার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গিয়ে ডাব ক্রয় করে থাকেন। মনপুরা উপজেলায় বর্তমানে তার মতো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জনের অধিক পাইকার আছেন। কেউ দৈনিক ডাব ক্রয় করেন, কেউ সপ্তাহে, আবার কেউ মাসে ক্রয় করেন।তারা ডাব গাছের মালিকদের কাছ থেকে ৫০ টাকায় ডাব কিনে লোকজন দিয়ে গাছ থেকে পাড়ান। এরপর অটোরিকশা ও ভ্যান নিয়ে লঞ্চঘাটে নিয়ে যান। পরে লঞ্চ ও স্টিমারে করে ঢাকা সদর ঘাটের পাশের পাইকারি আড়তে পাঠান। ওই পর্যন্ত পাঠাতে শ্রমিক, অটোরিকশা, ভ্যান, লঞ্চ বা স্টিমার ভাড়া মিলে ১৪ থেকে ১৮ টাকার মতো খরচ পড়ে যায় প্রতি পিস ডাবে। অর্থাৎ কৃষক থেকে ৫০ টাকা কিনলেও সেটি প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পড়ে যায়। পরে পাইকারি আড়তে আমরা ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি করতে পারি। তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, কৃষকরা নারিকেল গাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকছে। আমরা তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। গত অর্থ বছরে আমরা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার নারিকেল গাছের চারা দিয়েছি। এবছরও দেবো।
ভোলার সাতটি উপজেলায় ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ নারিকেল গাছ রয়েছে। গত অর্থ বছরে ১১ কোটি ৬ লাখ ৫৬ হাজার নারিকেল উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলায়।