একাত্তরে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই বঙ্গবন্ধুর ‘থ্রি লাখ’ ‘থ্রি মিলিয়ন’ বিভ্রান্তির গল্প বলা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলেছে মোট ২৬৬ দিন। এর মধ্যে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া মানে প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার ২৭৮ জন শ'হী'দ। বিষয়টা এতো সহজ না। ৩ লাখ হলে ১১২৮ জন প্রতিদিন গড়ে। কি হিসেব মিলে?
আমরা দেখব, শেখ মুজিব দেশে আসার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত দেশি সংবাদপত্র কী বলছে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে।
শেখ মুজিবই যদি ভুলটি করে থাকেন তাহলে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে ৯ জানুয়ারি, ১৯৭২ পর্যন্ত নিচের সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতে ত্রিশ লাখ শহীদের কথা কী করে এল।
১. যেমন দৈনিক পূর্বদেশ-এর সম্পাদক তাঁর পত্রিকায় ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর ‘ইয়াহইয়া জান্তার ফাঁসি দাও’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় লেখেন। সেখানে পরিষ্কার লেখা হয়, ‘হানাদার দুশমন বাহিনী বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ নিরীহ লোক ও দুশতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে...’।
২. এরপর রাশিয়ার প্রাভদা, ৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ ত্রিশ লাখের কথা উল্লেখ করে।
৩. মর্নিং নিউজ, ৫ জানুয়ারি ১৯৭২ ত্রিশ লাখের কথাই আবার উল্লেখ করে সেই সংখ্যাটা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়।
৪. ঢাকার পত্রিকা দৈনিক অবজারভার শিরোনাম করে এভাবে, ‘পাক আর্মি কিল্ড ওভার ৩০ লাখ পিউপল’, যেটা প্রকাশিত হয় ৫ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে মুজিব দেশে আসার ৩ দিন আগে। ৪ জানুয়ারি আজাদ পত্রিকাও প্রাভদার কথা উল্লেখ করে তাদের সংবাদে।
৫. দৈনিক বাংলা পত্রিকা তাদের, ৬ জানুয়ারি, ১৯৭২ ‘জল্লাদের বিচার করতে হবে’ শিরোনামে করা প্রবন্ধ ত্রিশ লাখ শহীদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। যেটা প্রকাশিত হয় ৮ তারিখের আগে।
সুতরাং দলিলপত্র যাচাই করে এই পর্যন্ত পড়ে আসা যেকোনো একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নিশ্চয়ই মেনে নিতে বাধ্য হবেন ত্রিশ লাখ ফিগারটা মুজিবের মাথায় হঠাৎ করে আসেনি।
শহীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েছিল এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছিল। স্বাধীনতার পর দেশি পত্রিকাগুলোতেও এই সংবাদ প্রচারিত হতে থাকে এবং মুজিব জেলে থাকতে থাকতেই সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এই সত্য পৌঁছে গিয়েছিল।