লাংটাং ভ্যালি অভিযানে ৫ বাংলাদেশি নারী

লাংটাং ভ্যালি অভিযানের জন্য নেপালে গেলেন পাঁচ বাংলাদেশি নারী। বেগম রোকেয়ার লেখা থেকে এই অভিযানের স্লোগান দেওয়া হয়েছে ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত’। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকা ছাড়েন। ওই পাঁচ নারীকে নিয়ে লাংটাংয়ে ‘শীতকালীন অভিযান’ আয়োজন করেছে পর্বতারোহীদের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’। শুক্রবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ আয়োজনের কথা জানানো হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার। তার সঙ্গী হয়েছেন পর্বতারোহী ইয়াসমিন লিসা ও তহুরা সুলতানা রেখা এবং প্রশিক্ষণার্থী ট্রেকার এপি তালুকদার ও অর্পিতা দেবনাথ। এপি তালুকদার ও অর্পিতা দেবনাথ বেইজক্যাম্প পর্যন্ত ট্রেক করবেন জানিয়ে নিশাত মজুমদার বলেন, “নেপালের লাংটাং হিমালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই শীতকালীন অভিযানের লক্ষ্য তিনটি শিখরে আরোহণ করা। “যার মধ্যে আছে- নয়া কাঙ্গা পিক (৫,৮৪৪ মিটার), ব্যাডেন পাওয়েল পিক (৫,৮৫৭ মিটার) এবং ইয়ালা পিক (৫,৫০০ মিটার)।" সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গেল মে মাসে ইউনেস্কোর মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রিজিওনাল রেজিস্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক তালিকায় স্থান পেয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা নারীর মুক্তিপ্রত্যাশী কাহিনী ‘সুলতানাজ ড্রিম'। এই সাহিত্যকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘সুলতানাজ ড্রিম আনবাউন্ড’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত’ স্লোগানে এই পর্বত অভিযান আয়োজন করা হয়েছে। সুলতানার স্বপ্ন সংক্রান্ত দলিলপত্র ও তথ্যের সংরক্ষক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের রচনার স্বীকৃতির জন্য ইউনেস্কোর কাছে আবেদন করেছিল বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, “বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে সুলতানার স্বপ্ন এখনো কীভাবে ভূমিকা রাখছে, সেটাই আরও বেশি মানুষের কাছে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে।"
নিশাত মজুমদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পর্বতারোহণ বিভিন্ন দিক থেকে দুর্গম, দুরুহ ও ব্যয়বহুল। আবার মেয়েদের জন্য প্রতিবন্ধকতার পাহাড় জয় আরও কঠিন। ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের তরুণীরা পিছিয়ে পড়ছে অনেকখানি। “পর্বতারোহণ ও পর্বতারোহণে উৎসাহ দেওয়া ‘অভিযাত্রী’র অন্যতম প্রিয় কাজ। ২০১৩ সাল থেকে ‘অভিযাত্রী' নিষ্ঠার সাথে এই কাজটি করার চেষ্টা করছে।” নিশাত বলেন, “বেগম রোকেয়া প্রত্যাশা করতেন, বাংলার নারী একদিন সত্যিকার অর্থেই জেগে উঠবে আর তার প্রতিভা ও দৃঢ়তার দ্যুতি ছড়াবে সর্বত্র। নারী নেতৃত্ব দেবে মেধায়, নারী নেতৃত্ব দেবে দুঃসাহসিকসব কাজে। নারী হয়ে উঠবে অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎসস্থল, সাফল্যের দীপ্ত প্রতীক। “রোকেয়ার প্রস্থানের একশ বছর পর বাংলার নারী আজ জেগেছে। সমাজের সর্বত্র নারী তার সাফল্যের চিহ্ন রেখে যাচ্ছে। পেশায় নেশায় স্বপ্নে নারী বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারী আজ দুর্গম পাহড়ে চড়ছে, সাঁতরে পেরুচ্ছে দুরন্ত সমুদ্র, চষে ফিরছে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তর।" মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, যাতে সহযোগী হিসেবে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মাস্টারকার্ডের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন নাট্যনির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার।