মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত সুমাইয়ার

অদম্য মেধাবী সুমাইয়া হোসেন শামা। নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের হারিগাছা গ্রামের ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন ও গৃহিণী শামিমা আকতার দম্পতির মেয়ে। মেধাবী সুমাইয়া পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে এবং পরবর্তী সময়ে খরচ চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সুমাইয়াসহ তার বাবা-মা। নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা সুমাইয়া হোসেন শামা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আমার বাবা এলাকার একটি স্কুলে প্রায় ১৪ বছরের মতো বিনা বেতনে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে জ্বালানি কাঠ কেটে শুকিয়ে বাজারের বিভিন্ন হোটেল ও চায়ের দোকানে বিক্রি করে সংসার চালান।
সুমাইয়া বলেন, আমি হাইস্কুলে থাকতে প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে অন্য একটি গ্রামে গিয়ে প্রাইভেট পড়েছি। স্কুলের শিক্ষকরাও সকল বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করত। এভাবে এসএসসিতে এ প্লাস পাই। ভালো রেজাল্ট করা আমার অন্য সহপাঠীরা অনেকেই রাজশাহী-ঢাকায় ভর্তি হয়। কিন্তু অর্থিক টানা-পোড়েনের কারণে আমাকে নাটোর নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজে ভর্তি করে দেন বাবা। এরপর শিক্ষকদের সহযোগিতাসহ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে লেখা পড়ার খরচ চালাতাম। এইচএসসিতেও গোল্ডেন এ প্লাস পাই। পরে একটি কোচিং সেন্টার আমাকে অল্প খরচে মেডিকেল কোচিং করার সুযোগ করে দেয়। আলহামদুলিল্লাহ, পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। লেখাপড়া শেষ করে একজন ভালো চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে সমাজের দরিদ্র অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
কিন্তু বাবার আয় দিয়ে মেডিকেলে পড়াশোনার ব্যয়ভার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান সুমাইয়া। সুমাইয়ার বাবা শাহাদত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সহায় সম্পত্তি বলতে তেমন কিছু নেই, দুই কক্ষের একটি বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করি । মেয়ে সুমাইয়ার ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। শুনেছি মেডিকেলে লেখাপড়ার অনেক খরচ। কিন্তু মেয়েকে ভর্তি করার মতো সামর্থ্য-ই আমার এখন নেই। ছাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনতাজ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে সুমাইয়া। এসএসসিতে এ প্লাস ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। স্কুলে পড়ার সময় দারিদ্র্যের কারণে আমরা শিক্ষকরা সকল বিষয়ে সুমাইয়ার পাশে থাকতাম। তার বাবা দীর্ঘ সময় বেকার খেটেছে, এক কথায় কোনো কর্ম ছিল না। এখন কাঠের যেই ব্যবসা করে সেটা দিয়ে সংসার চালানো দুষ্কর, মেয়েকে মেডিকেলে পড়াবে কীভাবে। তাই সুমাইয়ার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আশার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহান সাথী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দরিদ্র, মেধাবী এবং লেখাপড়ায় ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু টাকা-পয়সার জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছেন না এমন শিক্ষার্থীদের পাশে অবশ্যই আমরা দাঁড়াব। সুমাইয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন ইউএনও।