ক্যাম্পে না উঠিয়েই বাদ দেওয়ায় তীব্র সমালোচনায় ক্যাবরেরা

সাবেক জাতীয় ফুটবলার জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু বলেন,‘আমার খেলোয়াড়ী জীবন থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কখনো দেখিনি দুই বার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ মানেই সেই খেলোয়াড়রা ক্যাম্পে আসবে ও অনুশীলনের সুযোগ পাবে। এবারই দেখলাম ব্যতিক্রম।’ আগামীকাল শুরু হওয়া ক্যাম্পে চলবে দিন পাঁচেক। এরপর সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হবে বাংলাদেশ। অন্তত এই পাঁচ দিন সকলকেই দেখতে পারতেন বলে মত এই সাবেক ফুটবলারের,‘আটজনকে কয়েক দিন অন্তত অনুশীলনে দেখার সুযোগ ছিল। এরপর সৌদি আরব যাওয়ার সময় তিনি তার প্রয়োজন মতো নির্বাচন করতে পারতেন।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি ৩৮ থেকে সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনাটা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তার প্রশ্ন,‘প্রথম লেগের পারফরম্যান্স দেখেই তো সেই ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করেছিল। তাদের ক্যাম্পে না উঠিয়ে অনুশীলন এবং পারফরম্যান্স যাচাই না করে কিসের ভিত্তিতে তাদের বাদ দেয়া হলো?’ পাশাপাশি কোচের পরিকল্পনাহীনতা ও বাদ পড়া খেলোয়াড়দের সম্মানহানীর বিষয়টি উত্থাপন করেছেন এমিলি, ‘তিনি ৩০ জন নিয়েই অনুশীলন করানোর পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে তো ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। ৩৮ জনের তালিকায় যারা ছিল তারা জাতীয় দলে আসছেন এমন একটা আশায় ছিল। সবাই বিষয়টি জানার পর এখন পরখ না করেই তাদের বাদ দেয়াটা অবশ্যই অসম্মানজনক হয়েছে।’
জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে এই মৌসুমে দুর্দান্ত খেলা আশরাফুল ইসলাম রানা গতকাল সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন গোলরক্ষক জিকো ও ডিফেন্ডার ইয়াসিনকে আগেভাগেই বাদ দেওয়া। আবাহনী এবার বিদেশি ছাড়া প্রথম লেগে মাত্র এক গোল হজম করেছে। সেখানে ইয়াসিনকে ক্যাম্পের আগেই বাদ দেয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না রানাসহ আরো অনেকে। জাতীয় দলের সাবেক তারকা গোলরক্ষক ছাইদ হাসন কানন এখন বাফুফে ও জাতীয় দল কমিটির সদস্য। এরপরও তিনি সাবেক ফুটবলার হিসেবে গোলরক্ষকের বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, ‘প্রাথমিক স্কোয়াডে বিগত সময়ে তিনিই (হ্যাভিয়ের) তিনের অধিক গোলরক্ষক ডেকেছিলেন। এবার প্রাথমিক স্কোয়াডে মাত্র তিন জনই। ২৩ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডে তিন জন গোললক্ষকই থাকেন। প্রাথমিক স্কোয়াডে তিন জনই রাখা মানে তারা চূড়ান্ত। ঢাকায় ও সৌদিতে আরেকজন বেশি গোলরক্ষক থাকলে গোলরক্ষক পজিশনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকত।’কানন সাবেক ফুটবলার হিসেবে মন্তব্য রাখলেও জাতীয় দল কমিটির একাধিক সদস্য কোচের এমন কাজকর্মে কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতীয় দল কমিটির সভায় সিলেকশন কমিটির দাবি উঠেছিল। এই ঘটনায় সেটা আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছি সামনের সভায়।’
কোচ খেলোয়াড় নির্বাচন করলেও ফেডারেশন গণমাধ্যমে এটি প্রকাশ করে। দুই ধাপে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাই অনেক সাবেক ফুটবলার এখানে ফেডারেশনেরও দায় দেখেন। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মাস খানেক আগে প্রায় ৫০ জন খেলোয়াড়দের নিবন্ধন করাতে হয় ফেডারেশনকে।সেই প্রাথমিক তালিকায় থাকা ফুটবলারদের নাম গণমাধ্যমে কখনো আসে না। যাদের নিয়ে ক্যাম্প ও অনুশীলন শুরু হয় তাদের নামই মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়ে আসছে এতদিন। তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়ে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ভিন্ন পথে হাটতে গিয়ে উল্টো নিজেকে ও ফেডারেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবশ্য এতে কোচের তেমন কিছু আসে যায় না। কারণ ফেডারেশনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারক তার ওপর সন্তুষ্টই রয়েছেন এখন পর্যন্ত!