মহাকাশে স্যাটেলাইটের ওপর তৈরি হবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ

কৃত্রিমভাবে সূর্যগ্রহণ তৈরিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি সিনেমার কাহিনির মতো শোনালেও এখন এমন ঘটনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা। এজন্য মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ তৈরি করবে এ স্যাটেলাইট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সূর্যকে আরও বিশদভাবে গবেষণা করতে সহায়তা করবে তাদের এ প্রচেষ্টা। ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ’-এর ‘প্রোবা-৩’ মিশনে রয়েছে দুটি স্যাটেলাইট। যার একটি স্যাটেলাইট সূর্যকে ঢেকে রাখবে ও অন্য স্যাটেলাইটটি এ ঘটনা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তা রেকর্ড করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি। বুধবার ভারতের ‘সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার’ থেকে একসঙ্গে এই মহাকাশযান দুটিকে উৎক্ষেপণ করা হবে।
মহাকাশযান দুটি একসঙ্গে উৎক্ষেপণের প্রায় ১৮ মিনিট পরে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। পাশাপাশি লেজার ও আলোক সেন্সর ব্যবহার করে ১৪৪ মিটার দূরত্বে পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করবে। এক্ষেত্রে একটি স্যাটেলাইট সূর্যকে ঢেকে রাখবে এবং স্যাটেলাইটটি এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করবে ও তা রেকর্ড করবে। এ জটিল কাজটি করার জন্য মহাকাশযানের যে ছায়া তৈরি হবে, অপর স্যাটেলাইটকে সে অনুসারে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকতে হবে। এর মানে হচ্ছে, স্যাটেলাইট দুটি সূর্যের স্বাপেক্ষে এক মিলিমিটারের বেশি এদিকওদিক সরবে না। আর এ বিষয়টিকেই দেখা হচ্ছে ইএসএ-এর কোনো স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে সুনির্দিষ্টভাবে ওড়ার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা জানি, চাঁদ যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চলে আসে তখন গ্রহণ ঘটে।
এটি এমন এক মহাজাগতিক ঘটনা, যেখানে সূর্যের ব্যাস চাঁদের তুলনায় চারশ গুণ বড় হলেও এটি পৃথিবী থেকে প্রায় চারশ গুণ দূরে রয়েছে, আর এর ফলেই সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে রাখতে পারে চাঁদ। সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের অংশ সাধারণত ‘করোনা’ হিসাবে পরিচিত, যেটি সূর্যের জ্বলন্ত মুখের চেয়ে দশ লাখ ভাগের একভাগ ক্ষীণ। তাই কেবল গ্রহণকালেই প্রাকৃতিকভাবে দেখা যায় এমন দৃশ্য। তবে এমনটি খুব কম সময়ের জন্যই দেখা মেলে। আর এ বিষয়টি নিয়েই গবেষণা করতে চান বিজ্ঞানীরা। কারণ সূর্যের এ অংশেই ঘটে সৌর ঝড়। শক্তিশালী মাত্রার এই সৌর ঝড় পৃথিবীতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ব্যাহত হতে পারে স্যাটেলাইট ও বিদ্যুচ্চালিত বিভিন্ন ডিভাইসের কাজ।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ মোটামুটিভাবে প্রতি দুই বছরে ঘটলেও পৃথিবীর খুব কম অংশ থেকেই এ দৃশ্য দেখা যায়। তাই কোনো ব্যক্তি পৃথিবীর কোন অংশে বাস করেন বা কোথায় থাকেন তার উপর নির্ভর করে একটি সূর্যগ্রহণ ও এর পরের সূর্যগ্রহণের মধ্যে সময়সীমা চারশ বছর হতে পারে। এ ছাড়া সূর্যগ্রহণ দেখতে পাওয়ার বিষয়টি আবহাওয়ার উপরও নির্ভর করে। যেমন– মেঘের মাধ্যমে ঢেকে যেতে পারে সূর্যগ্রহণের দৃশ্য। খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না সূর্যগ্রহণ। তাই এ নিয়ে গবেষণার কাজটি খুব জটিল হয়ে ওঠে বিজ্ঞানীদের জন্য। ইএসএ-এর এই নতুন মিশনের লক্ষ্য হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা যখন চাইবেন তখনই যেন পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। এমনকি সূর্যগ্রহণের স্থায়ীত্বও যাতে কয়েক মিনিটের বদলে কয়েক ঘণ্টা বাড়ানো যায়।