সোনালি যুগে বিচিত্র পেশায় নারী

ইসলামের ইতিহাসে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে নারী আর্থসামাজিক উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন। হাজার বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে নারীরা পর্দা-শালীনতা বজায় রেখে জ্ঞানচর্চা, সমাজসেবা ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন এবং পুরুষদের মতোই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।
মহানবী (সা.) বিভিন্নভাবে নারীদের জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর যুগে অনেক প্রাজ্ঞ নারী সাহাবি ছিলেন। নবীপত্নী আয়েশা (রা.)-এর জ্ঞানের কাছে অনেক অভিজ্ঞ সাহাবিও হার মেনেছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের অসামান্য অবদান নিয়ে ৪৩ খণ্ডের বিশাল এক বিশ্বকোষ রচনা করেছেন কেমব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভি। তাতে ১০ হাজারের বেশি নারী হাদিসবিশারদ ও শিক্ষাবিদের জীবন-কর্ম-অবদান তুলে ধরা হয়।
মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যও করতেন। চিকিৎসক হিসেবেও নারীরা ব্যাপক অবদান রাখেন। নারী সাহাবি উম্মে সুলাইমের নেতৃত্বে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা দেওয়া হতো। সে যুগে কৃষিকাজেও নারীর অংশগ্রহণ ছিল। হস্তশিল্পের মাধ্যমেও নারীরা অর্থ উপার্জন করতেন। ওমর (রা.)-এর যুগে প্রখ্যাত আইনজ্ঞ শিফা বিনতে আবদুল্লাহকে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়। আলী (রা.)-এর যুগে আয়েশা (রা.)-এর ভূমিকা নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা এবং সুলতান মালিক শাহর স্ত্রী তুরকানের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো মুসলিম নারীর সমাজসেবার অনন্য উদাহরণ। একাদশ শতাব্দীতে মুসলিম নারীরা দামেস্কে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যা নারীদের দ্বারাই পরিচালিত হতো। তা ছাড়া, স্পেনের আয়েশা বিনতে আহমদ ছিলেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার, লুবনি ছিলেন ভাষাবিদ ও রাবিয়া কাসিসাহ ছিলেন প্রসিদ্ধ বক্তা। সমাজে নারীর অসামান্য অবদানের পরিপ্রেক্ষিতেই বিখ্যাত মুসলিম স্কলার ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, সমাজের অর্ধেকই নারী। বাকি অর্ধেকেরও জন্ম দেন নারী। তাই নারীরাই যেন পুরো সমাজ।