পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের ধস ঠেকাতে নেই উদ্যোগ, পাউবো-বিবিএর ঠেলাঠেলি

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশ ধস পড়ে গত ৩ নভেম্বর। এরপর পেরিয়ে গেছে এক মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু ধস ঠেকাতে কারো কোনো উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে পাউবো এবং বিবিএ এই দুই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে ঠেলাঠেলি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ধস ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনও করেছে এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীন ২০১০-১১ অর্থবছরে সেতুর উজানে ১১ কিলোমিটার ও ভাটিতে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার নদীশাসন কাজ সম্পন্ন করে।
বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল বিবিএর। গত ৩০ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে হস্তান্তর করেনি বিবিএ।
গত ৩ নভেম্বর হঠাৎ করে সেতুর দুই কিলোমিটার ভাটিতে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্টে পদ্মাসেতু রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশ ধসে পড়ে। এতে আতংকিত হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু এক মাস পেড়িয়ে গেলেও বাঁধের ধস ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কেউ এগিয়ে আসেনি। এ নিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে শুরু হয়েছে ঠেলাঠেলি। একে অপরকে চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তাদের কার্যক্রম।
বিবিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, যেহেতু পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাই বাঁধ রক্ষায় তাদের কোন দায়দায়িত্ব নেই। এটা দেখার দায়িত্ব এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বিবিএ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ভাবে হ্যান্ডওভার না করায় তাদের করার কিছু নেই। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে ঠেলাঠেলি।
এদিকে, এক মাস পেড়িয়ে গেলেও বাঁধের ধস ঠেকাতে উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ধস ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে মাঝিরঘাট এলাকাবাসী। পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী।
মাঝিরঘাট বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা শেখ বলেন, ‘বাঁধ ধসে পড়েছে একমাস হয়। কিন্তু ধস ঠেকাতে কেউ এগিয়ে আসছে না। দ্রুত ধস ঠেকাতে পদক্ষেপ না নিলে মাঝিরঘাট বাজার ও পদ্মাসেতু ঝুঁকিতে পড়বে। আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পদ্মাসেতু রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা জলিল তালুকদার বলেন, ‘বাঁধের পাশেই আমার বসতবাড়ি। চোখের পলকে বাধঁটি ধসে পড়ে। এখন আমাদের প্রতিটি রাত কাটে দুশ্চিন্তায়। কিন্তু বাঁধ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের এলাকা বিলীন হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, ‘ধসে পড়া স্থানটি বিবিএর নদী শাসনের আওতাভুক্ত। তারাই বাধঁটি নির্মাণ করেছে এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট থেকে ভাটিতে ৪ কিলোমিটার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। ধসে পড়া স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গত ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চিঠির মাধ্যমে বিবিএ’র কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তখন তারা রাজি হয়নি। তখন তারা যদি রাজি হতেন তাহলে আমাদের প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারতাম। কিন্তু এখন বাঁধ ধসে পড়ায় তারা আমাদের ব্যবস্থা নিতে বলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমাদের কোন বরাদ্ধ না থাকায় আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত আমাদের কিছু করার নেই।’
এদিকে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) মো. শারফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ধসে পড়া স্থানটি আমাদের নদী শাসনের আওতাভুক্ত নয়। ওটা আমাদের অধিগ্রহণ এলাকার বাইরে। অধিগ্রহণের বাইরে আমরা নদীতে কোন কাজ করিনা, সেটা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমাদের কনস্ট্রাকশন ইয়াড প্রটেক্ট দেওয়ার জন্য সেখানে আমরা টেম্পোরারি বাঁধ করেছিলাম। ধস ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। এখন সেটা তাদেরই করতে হবে।’