মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে বাসা ভাড়া নেন আরসা প্রধান আতাউল্লাহ

চট্টগ্রামের মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জের সহযোগীদের সিদ্ধিরগঞ্জে নিয়ে বসবাস করছিলেন রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনী। চিকিৎসার জন্য থাকার কথা বলে গত নভেম্বরে ভূমি পল্লী আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়। ফ্ল্যাটটি থেকে আতাউল্লাহসহ ছয় জনকে গ্রেফতারের পর বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লী আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ১০তলা ভূমি পল্লী টাওয়ারের অষ্টম তলার ফ্ল্যাট থেকে আতাউল্লাহ, পরিবারের সদস্য ও সহযোগীসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় আতাউল্লাহর শিশুসন্তানেরাও ছিল। একই দিন ময়মনসিংহ নতুন বাজার এলাকার গার্ডেন সিটির ১০ তলার ফ্ল্যাট থেকে দুজন নারী এবং দুজন পুরুষসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গেও শিশুসন্তান ছিল। এ ঘটনায় র্যাব-১১ এর ওয়ারেন্ট অফিসার শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন । পৃথক দুটি মামলায় আতাউল্লাহসহ ছয় জনকে পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শিশুদের গ্রেফতার দেখানো হয়নি তারা মায়েদের সঙ্গে আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম বলেন, আরসার প্রধান পাহাড় থেকে পড়ে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথা পেয়েছিলেন । পরিচয় গোপন করে চিকিৎসার জন্য তারা এখানে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন । ওসি বলেন, তারা কী উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিলেন, তাদের কী পরিকল্পনা ছিল, রিমান্ডে এসব তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।ভূমি পল্লী টাওয়ারের ১০ তলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের মালিক চট্টগ্রামের ফল ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম। ফ্ল্যাটটির দেখাশোনা করেন তার শ্বশুর হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, গত নভেম্বর মাসে সরকারি লোক পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি আতাউল্লাহকে তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটটি ১১ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। তখন বলা হয়, আতাউল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামে, মাছের ব্যবসা রয়েছে। তিনি অসুস্থ, এখানে ফ্ল্যাটে ভাড়া থেকে চিকিৎসা করাবেন। ভাড়া নেওয়ার সময় ঐ ব্যক্তি তার সরকারি আইডি কার্ডও দেখিয়েছিলেন। গত সোমবার রাতে গ্রেফতারের পর তারা জানতে পারেন, ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া ব্যক্তিটি আরসার প্রধান আতাউল্লাহ।
বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী ইমরান আলী বলেন, চার মাস আগে কালো হাইয়েস মাইক্রোবাসে জুব্বা ও মাথায় টুপি পরা আতাউল্লাহসহ চার-পাঁচ জন এসে ফ্ল্যাটে ওঠেন। ঐ সময় তিনি একজনের কাঁধে ধরে লাঠিতে ভর করে ফ্ল্যাটের ওপরে ওঠেন। তিনি আরো বলেন, তারা ফ্ল্যাটেই থাকতেন। কারও সঙ্গে মিশতেন না। প্রয়োজন হলে বাইরে যেতেন। তবে আতাউল্লাহ খুব কম বের হতেন। সময়মতো তারা ভাড়া পরিশোধ করে দিতেন। কয়েক দিন পর পর তাদের আত্মীয় পরিচয়ে লোকজন আসত। গত সোমবার বাদ এশা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে আতাউল্লাহর স্ত্রী শাহীনা আক্তার, দুই সন্তান এখানে আসেন। এরপর ঐ দিন রাতেই গ্রেফতার হন তিনি।তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ‘জায়গা সংকুলান না হওয়ায়' মাস দেড়েক পর তারা অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে ওঠেন। তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, তারা ১ মাস ১০ দিন থাকলেও দুই মাসের ভাড়া প্রদান করেন। জানুয়ারি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় আট তলার বড় ফ্ল্যাটে ওঠেন। তিনি বলেন, তারা নিয়মিত নামাজ পড়তেন, তার পেছনে এক দিন নামাজও পড়েছিলেন তিনি । এক দিন লুঙ্গি বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন দেখে তাকে একটি জায়নামাজও দেন হুমায়ুন কবীর । আট তলার ফ্ল্যাটটির মালিক ইতালিপ্রবাসী হালিম সরকার। সেটি দেখাশোনা করেন তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় খোরশেদ আলম।তিনি বলেন, তৃতীয় তলায় ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকায় তাদের (আতাউল্লাহ) আট তলার ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, মসজিদে যান। তাদের কথাবার্তা ও চলাফেরায় কখনো রোহিঙ্গা বা সন্ত্রাসী নেতা বলে মনে হয়নি।
এদিকে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ সহযোগীদের নিয়ে গত প্রায় চার মাস ভবনটিতে অবস্থান করলেও বুঝতে পারেননি অন্য ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা। ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কারো সঙ্গে মিশতেন না। মাঝেমধ্যে ইমরান নামের একজনকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে ও বাজার করতে দেখেছেন। মাঝেমধ্যে আতাউল্লাহকে চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে দেখেছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।এ ঘটনার পর ঐ ভবনের ফ্ল্যাটের মালিকেরা বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে শুরু করেছেন। ভবনের চার তলার ফ্ল্যাটের মালিক মোশারফ হোসাইন বলেন, 'এত বড় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার প্রধান আমাদের ভবনের ফ্ল্যাটে ভাড়া ছিলেন, আমরা কেউ জানতাম না। তাকে কেউ চিনতেও পারিনি । আতাউল্লাহ ও তার সহযোগীরা যদি আমাদের ফ্ল্যাটের সবাইকে জিম্মি করে ফেলতেন, তখন আমাদের কী অবস্থা হতো। যারা তাদের ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন, তারা এই দায় এড়াতে পারেন না।' সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম বলেন, আরসার প্রধান আতাউল্লাহসহ গ্রেফতার ১০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আতাউল্লাহর সঙ্গে যারা আটক হয়েছেন, তারা তার বডিগার্ড।