হাঁক-ডাকে জমজমাট নিউমার্কেটের ফুটপাতের ঈদ বাজার

‘এক্সপোর্টের শার্ট নেন, মাত্র আড়াইশ টাকা’, ‘পাঞ্জাবি নেন, মাত্র তিনশ টাকা’, ‘প্যান্ট লন, গেঞ্জি লন’, ‘দেইখা লন, বাইচ্ছা লন, এক দাম-এক রেট’ –এমন হাঁক-ডাকে জমে উঠেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের ঈদ বাজার। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নীলক্ষেত এবং বাটা সিগন্যাল থেকে গাউছিয়া মার্কেট পর্যন্ত হাজারের বেশি দোকান বসেছে। সারি সারি এসব দোকানে কসমেটিকস, জামাকাপড়, জুতা, ব্যাগ, গহনাসহ ঈদ উপলক্ষ্যে নানা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। আর এসব পণ্য বিক্রি করতেই তারা ছন্দে ছন্দে ডাকছেন। ক্রেতারাও ঘুরে ঘুরে নিজেদের পছন্দের জিনিস কেনাকাটা করছেন। সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, বাটা সিগন্যাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে জামাকাপড়, জুতা, গেঞ্জিসহ বিভিন্ন পণ্যের সমারোহ সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়ও। দোকানগুলোতে নারীদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, সালওয়ার কামিজ আর পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, টিশার্ট ও প্যান্টের পসরা সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য রঙিন জামাকাপড়, খেলনা এবং ঈদ স্পেশাল গিফট আইটেমও বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, ফুটপাতে কম দামে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে কিছুটা সাশ্রয়ের আশায় তারা এখানে ভিড় করছেন। আবার ঘুরেফিরে কেনাকাটার মধ্যেও ঈদের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন অনেকে।
নূরজাহান নামের এক ক্রেতা বলেন, মূলত মার্কেট থেকে কেনাকাটার জন্যই নিউমার্কেট এসেছি। কিন্তু এসে দেখলাম ফুটপাতেও সাশ্রয়ী দামে অনেক জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে দাম একটু কম এবং পোশাকেরও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন রয়েছে। তাছাড়া ঈদের জন্য কেনাকাটা করতে মার্কেটে আসাটা এক ধরনের আনন্দের বিষয়। তাই ঘুরেফিরে মার্কেটের পাশাপাশি বাইরের ফুটপাতও দেখছি। আমি মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাত থেকেও বাচ্চাদের জন্য কিছু জামা এবং খেলনা কিনেছি।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ফুটপাতের বাজারে এলে মনে হয় ঈদ খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। সকাল বেলা এসেছি। কিন্তু তখন থেকেই পুরো এলাকায় মানুষের উপস্থিতি অনেক। তাছাড়া সুন্দর সুন্দর পোশাক এবং বিভিন্ন আইটেম এখানে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ফুটপাতে দাম কিছুটা সাশ্রয়ী এবং পণ্যের মানও বেশ ভালো। সেজন্য ফুটপাত থেকেই পাঞ্জাবিসহ কয়েকটি পোশাক কিনেছি। দামাদামি করে নিতে হচ্ছে। তবে সেটিও বেশি দামে নয়। মার্কেটের চেয়ে কম দামেই কিনতে পেরেছি। তাছাড়া ঈদ সামনে রেখে এখানে সাজানো জামাকাপড়, জুতা, গহনাসহ সব কিছুই আকর্ষণীয়। আর বিক্রেতারা বলছেন, কম লাভে বেশি বিক্রির নীতি অবলম্বন করছেন। ন্যূনতম ৩০০ টাকা থেকে বিভিন্ন শার্ট, পাঞ্জাবি ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে। যার দাম দোকানগুলোতে সাতশ থেকে এক হাজার টাকার নিচে নয়।
সায়েন্সল্যাব মোড়ের পাশের ফুটপাতে পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি কারা রবিউল নামের এক হকার বলেন, এসময় ব্যবসা বেশ ভালো চলে। আমরা সীমিত লাভে বেশি বিক্রি করি। এতেই পর্যাপ্ত লাভ হয়। দোকানে কাপড় কিনতে গেলে খরচ অনেক বেশি। সেখানে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কারেন্ট বিল যুক্ত হয়। কিন্তু আমাদের এমন খরচ নেই। সেজন্য কম দামেই পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি করছি। আমার দোকানে মানভেদে ২৫০-৩০০ টাকায় পায়জামা এবং ৩০০-৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। মারুফ হোসেন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ফুটপাতে আমরা যারা দোকান দেই তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এখন গরমের সমস্যা বেশি। কিন্তু যখন ক্রেতারা আমাদের পণ্য কিনে হাসি মুখে চলে যায়, তখন খুব ভালো লাগে। আমরাও কম দামে বিক্রির চেষ্টা করি। আমি ন্যূনতম ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ এবং সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় টিশার্ট, পলো শার্ট বিক্রি করছি। বেচাকেনা বেশ ভালো।
পোশাকের পাশাপাশি গহনার বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে জানিয়ে ফাতেমা বেগম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আমি অনেক বছর ধরে ফুটপাতে ঈদের পণ্য বিক্রি করি। এসময়ে কাজের চাপ বেশি, তবে আনন্দও অনেক। আমি কম দামে বিভিন্ন গহনা বিক্রি করছি। মাত্র ৫০ টাকা থেকেই দাম শুরু হচ্ছে। কান, নাকের গহনা, মালা, হিজাব পিন এগুলো খুব অল্প দামে বিক্রি করছি। অন্যদিকে, নিউমার্কেট এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে। তথ্য ও সেবা কেন্দ্র বুথ থেকে এবং সেনাবাহিনীর অস্থায়ী বুথ থেকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি চুরি এড়াতে মোবাইল, মানিব্যাগ ও গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে অনেক জায়গায় মাইকেও সতর্ক করতে দেখা গেছে।