বেতন-ভাতা চেয়ে ডেল্টা লাইফের প্রস্তাবিত সিইও শহিদুলের আবেদন

নিয়োগ অব্যাহত রাখাসহ বকেয়া বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা চেয়ে বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে আবেদন করেছেন প্রস্তাবিত সিইও মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ১৯ মার্চ ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যানের অফার লেটার পেয়ে সিইও নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে সেই নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন করলে সার্টিফিকেট জনিত জটিলতার কারণে তা নামঞ্জুর করে দেয় আইডিআরএ । মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্ট থেকে আমার সার্টিফিকেটের বৈধতার রায় নিয়ে আসলেও আইডিআরএ’র তখনকার চেয়ারম্যান অসৎ উদ্দেশ্যে আমার নিয়োগ অনুমোদন না দিয়ে অতি গোপনে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কোম্পানি সচিব উত্তম কুমার সাধুকে সিইও নিয়োগ দেয়। এই বীমা কোম্পানির কাছে বকেয়া বাবদ প্রায় ৮০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিয়োগের শর্তানুযায়ি মাসিক বেতন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসেবে ২০ মাসের বেতন বাবদ পাওনা ৭০ লাখ টাকা। আর অন্যান্য সুবিধাদি বাবদ ১০ লাখ টাকা। ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো আবেদনে শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, যেহেতু আমি আপনাদের দেয়া আশ্বাসকে পূর্ণ বিশ্বাস করে বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানিতে সিইও হিসেবে নিয়োগ অফার পেয়েও যোগদান না করে দীর্ঘ ২০ মাসের অধিককাল অপেক্ষায় আছি ডেল্টা লাইফের সিইও হিসেবে অনুমোদন পেয়ে দায়িত্ব পালন করবো বলে।
সিইওকে তার পূর্বের (কোম্পানি সেক্রেটারি) পদে ফেরত পাঠিয়ে আমার নিয়োগ অনুমোদন করে সমুদয় বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি পরিশোধে ২-৫ কর্মদিবসের মধ্যে যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শহিদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘নিয়োগ অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়টি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বর্তমান চেয়ারম্যানকে অবগত করলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। যদি ডেল্টা লাইফ আমাকে সিইও নিয়োগের জন্য বোর্ড রেজুলেশন পাঠায় তবে তিনি এটা অনুমোদন দিবেন বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।’
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ ডেল্টা লাইফের সিইও হিসেবে নিয়োগ পান শহিদুল ইসলাম। কোম্পানি কর্তৃক নিয়োগের পর নিয়মানুযায়ি আইডিআরএ’র নির্ধারিত চেকলিষ্ট মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনুমোদনের জন্য ফাইল জমা দেওয়া হয় চেয়ারম্যান বরাবর। নিয়মানুযায়ি ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ অনুমোদন করার বিধান থাকলেও তৎকালীন চেয়ারম্যান কোন এক অদৃশ্য কারণে প্রায় ৫ মাস পেন্ডিং রেখে নামঞ্জুর করে দেন। কারণ হিসেবে বলা হয় শহিদুলের দারূল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জিত বিএ অনার্স ও এমএ’র সার্টিফিকেট দুটি সঠিক নয়। পরে রিভিউ আবেদন করলেও ৩ মাস পর একই কারণে নিয়োগ অনুমোদন দেয়নি আইডিআরএ ।
এ প্রেক্ষিতে গত ২ অক্টোবর ২০২৩ হাইকোর্টে শহিদুল একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করলে হাইকোর্ট রুল জারি করে। এতে পিটিশনকারী শহিদুলের বিএ অনার্স এবং এমএ’র সার্টিফিকেট বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এরপর রুলের সার্টিফাইড কপি জমা দিতে বলে আইডিআরএ। কিন্তু তখন অবকাশকালীন ছুটির কারণে হাইকোর্ট বন্ধ থাকায় সার্টিফাইড কপি হাতে পেতে দেরি হয়। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান নানান অনিয়ম দুর্ণীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন। তবে পদত্যাগ করার আগে ডেল্টালাইফের কোম্পানি সচিব উত্তম কুমার সাধুকে সিইও নিয়োগ দিয়ে যান।
এ ব্যপারে শহিদুল ইসলাম দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, তৎকালীন চেয়ারম্যান জয়নুল বারী প্রচলিত নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সিস্টেম ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যাকডেটে সিইও নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোম্পানি আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আইডিআরএ যখন আমাকে নিয়োগ অনুমোদন দেয়নি আমি আইনি ভাবে লড়ছিলাম তখন কোম্পানি আমাকে আশ্বস্ত করেছে এবং অন্য কোথাও আমাকে যোগ না দিতে অনুরোধ করেছে। এতে আমি বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।
বিষয়টি নিয়ে ডেল্টা লাইফের চেয়ারম্যান চৌধুরি হাফিজ দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, শহিদুল আমাদের কাছে কোন টাকা পায় না। তাকে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম এ কথা সত্য। আইডিআরএ অনুমোদন না দিলে আমরা তাকে চার্জ দিতে পারি না। আর চার্জ না পেলে সে পেমেন্ট পায় কিভাবে। এটা কি আইনে আছে আইনে থাকলে সে পাবে। তিনি বলেন, তার সার্টিফিকেট নিয়ে সমস্যা হয়েছে, আইডিআরএ তাকে অনুমোদন দেয়নি; আবার আমাদেরকে শোকজ করেছে সিইও কেন নিয়োগ দিচ্ছি না। পরে আমরা বাধ্য হয়ে বর্তমান সিইও সাধুকে নিয়োগ দিয়েছি। এখন একজনকে নিয়োগ দেয়ার পর আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়ার তো কোন উপায় নেই। হাইকোর্টতো একথা বলেনি যে তাকে নিয়োগ দেওয়া হোক। তাহলে না হয় তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো।
এ ব্যপারে শহিদুল ইসলাম বলেন, রুল ইস্যুর পর মামলা চলাকালীন সময়ে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত উক্ত বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে না। আর যে কারণে আমার সিইও নিয়োগ অনুমোদন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেটি যেহেতু পূর্বের ন্যায় বৈধ হিসেবে পুনরায় এসেছে সুতরাং এজন্যই আমার নিয়োগ অনুমোদন পেতে আর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।