তরুণদের লিগে ‘বুড়ো ক্রিকেটারদের পুনর্বাসন’ করছে পাকিস্তান!

দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট–ই সাধারণত নতুন ও তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতিভা দেখিয়ে উঠে আসার উত্তম মঞ্চ। কিন্তু পাকিস্তানের স্থানীয় প্রতিযোগিতায় তরুণদের বসিয়ে রেখে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় থাকা ‘বুড়ো’ ক্রিকেটারদের খেলানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিজ্ঞ ও জাতীয় দলে অনিয়মিত শোয়েব মালিক, ওয়াহাব রিয়াজ (অবসরপ্রাপ্ত) কিংবা সরফরাজ আহমেদরা খেলছেন দেশটির ন্যাশনাল টি২০ কাপে। আগামী ১৪ মার্চ থেকে শুরু হবে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই লিগ। যেখানে শিয়ালকোট দলে নেওয়া হয়েছে শোয়েব মালিককে। তাদের স্কোয়াড ঘোষণার পরই ক্রিকেটভক্তরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ– এর মাধ্যমে তরুণ প্রতিভার অপচয় করা হচ্ছে। বিশেষত বয়সভিত্তিক দলে পারফর্ম করে আসা আজান আওয়াইস, আলি শফিক, আওয়াইস আলি, আয়াজ তাসাওয়ার ও শাহজাইব ভাট্টির মতো তরুণরা আছেন দলের রিজার্ভ হিসেবে।
সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পাকিস্তানি ক্রিকেটভক্তরা। বিশেষ করে ব্যাটার আজান আওয়াইসের বাদ পড়াটা নিয়েই বেশি সমালোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে এক সমর্থক লিখেছেন, ‘মেন্টর (পরামর্শক) শোয়েব মালিকও এনটি২০–তে শিয়ালকোটের হয়ে খেলবেন। এই হলো পিসিবির অবস্থা। ক্লাউন।’ আরেকজন হতাশা প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘ন্যাশনাল টি২০ কাপে শিয়ালকোট রিজার্ভ স্কোয়াডে রেখেছে আজান আওয়াইসকে। আর মূল স্কোয়াডে আছেন মেন্টর শোয়েব মালিক।’
আজানের মূল দলে জায়গা না পাওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না নেটিজেনরা। সে কারণে তাদের কেউ কেউ ২০ বছর বয়সী এই ব্যাটারের সাম্প্রতিক ব্যাটিং পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন। এক ক্রিকেটভক্তের ভাষ্য– ‘২০২৪-২৫ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৪২২ রান করেছেন আজান, গড় ৫৬.৯। অথচ তাকেই স্কোয়াডে রাখেনি শিয়ালকোট, পরিবর্তে ৪৩ বছর বয়সী শোয়েব মালিক খেলবেন। একজন তরুণ ও প্রতিভাবান ব্যাটারকে সাইডলাইনে রাখা হয়েছে, যে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে ভারতের সঙ্গেও সেঞ্চুরি করেছেন।’
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সালমান বাটও এই বিতর্কে শামিল হয়েছেন। শোয়েব মালিকের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘এই ন্যাশনাল টি২০তে তরুণ তারকাদের বাইরে রাখা হলো। নিশ্চয়ই সেখানে শোয়েব মালিককে টুর্নামেন্টটিতে খেলানোর পেছনে সুনির্দিষ্ট যুক্তি আছে, কিন্তু এখানে আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।’ ন্যাশনাল টি২০ লিগে শোয়েম মালিককে (৪৩) শিয়ালকোট, ওয়াহাব রিয়াজকে (৩৯) করাচি এবং সাবেক পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে (৩৭) নিয়েছে লাহোর। গত বছর পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে এই তিন ক্রিকেটারই বিভিন্ন দলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু এবার তাদের ক্রিকেটার হিসেবে ডাক পাওয়া দেশটির ক্রিকেটাঙ্গনে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সমালোচনার মুখে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছেন ওয়াহাব–সরফরাজ। তবে এখনও শিয়ালকোটের লাইনআপে আছেন শোয়েব মালিক। ২০২৩ সালের অবসরের পর থেকে পিসিবির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছেন ওয়াহাব। বর্তমানেও আছেন পাঁচ সদস্যের মেন্টরশিপ প্যানেলে। এদিকে, পাকিস্তানের ১৬টি অঞ্চলে ১৮ দলের অংশগ্রহণে ১৫–২৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে ন্যাশনাল টি২০ কাপ।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান কোনো আইসিসি ইভেন্টেই কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। এমনকি ২৯ বছর পর নিজেদের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ফিরলেও, আসরটিকে স্মরণীয় করতে ব্যর্থ মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। কোনো জয় ছাড়াই তারা বিদায় নেয় গ্রুপপর্ব থেকে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তারা একই পরিণত দেখেছে। আর প্রতিটি টুর্নামেন্ট শেষেই দল গড়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এমন বিরূপ অবস্থা সত্ত্বেও বুড়োদের পুনর্বাসনেই যেন পাকিস্তানের পুরো মনোযোগ।