আরজু মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে অস্পষ্টতা: সিসিটিভি ফুটেজে প্রশ্নের ছাপ

নিশান খান, জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার ঘটনায় এক নিরীহ টেইলারিং মাস্টারকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার।
২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬:৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের প্রবেশ পথ সংলগ্ন রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হন আফসানা করিম রাচি। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে রাত ৭:৪৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই দুর্ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে ২৩ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে আরজু মিয়াকে প্রক্টর অফিসে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকেল ৪টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে একই দিন রাত ১০টার দিকে কিছু লোক তার বাসায় গিয়ে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই তল্লাশি চালায় এবং কালো হুডি ও কালো-লাল চেকের ট্রাউজার খুঁজতে তার কাপড় ও জিনিসপত্র তছনছ করে। পরবর্তীতে তারা আরজু মিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে তার গতিবিধি তদন্ত করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার সময় তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না।
পরিবারের দাবি, ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে আবারও আরজু মিয়াকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, দুর্ঘটনার সময় অটোরিকশায় দুইজন যাত্রী ছিলেন এবং এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা প্রত্যক্ষদর্শী। তবে ওই বিক্রেতা পরবর্তীতে জানান, তাকে জোরপূর্বক সাক্ষী বানানো হয়েছে এবং তিনি আরজু মিয়াকে দুর্ঘটনার সময় দেখেননি।
এছাড়া, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আরজু মিয়ার বাম হাতে দুর্ঘটনার কারণে ব্যথা হয়েছে, কিন্তু তার পরিবারের দাবি, এটি আসলে দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা ও ব্রেন স্ট্রোকের কারণে হয়েছে। তিনি দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না, এমনকি তার ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথেও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো তদন্ত করা হয়নি।
আরজু মিয়ার মেয়ে আরজিনা আক্তার জানান, তিনি সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে পোস্ট দিলে সেটি ডিলিট করা হয় এবং তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি মামলা প্রত্যাহার না করলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
পরিবারের আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো আরজু মিয়ার ছোট ছেলে, যার হার্টে সমস্যা রয়েছে এবং তার চিকিৎসার জন্য ২৬-৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কারাগারে থাকায় তারা চরম অর্থসংকটে ভুগছেন এবং আরজু মিয়ার জামিনের জন্য কোনো আইনজীবীও রাজি হচ্ছেন না।
আটক রিকশাচালক আরজু মিয়ার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা শক্তিশালী নই বলে আমাদের সাথে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েকবার ভিসি স্যারের দপ্তরে গিয়েছি। আমাদের সাথে দেখা করেননি। একজনের কাছে গেছে আরেকজনের কাছে যেতে বলে। এভাবে গত তিনমাসে অনেক দপ্তর ঘুরেছি। আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। আমি তার মুক্তি চাই। আমাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফোন দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, এবিষয়ে জানতে চাইলে আগামীকাল দুপুরে আমার অফিসে আসবেন।