শিরোনাম

বই না পেয়ে হতাশায় স্কুল শিক্ষার্থীরা

 প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন   |   ক্যাম্পাস

বই না পেয়ে হতাশায় স্কুল শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর এ স্কুলে মাত্র এক হাজার ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী বই পেয়েছে। বাকিরা খালি হাতে প্রতিদিন স্কুলে আসছে, ফিরে যাচ্ছে। এতে শিশুশিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা স্কুল ছেড়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম এবং দশম শ্রেণির বই পেয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবমের বই আসেনি। আসতে কিছুটা দেরি হবে বলে জেনেছি।’

প্রায় একই রকম পরিস্থিতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। সেখানে তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো কোনো বই পায়নি। দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুইটি করে বই পেয়েছে। এছাড়া দুই শ্রেণিতে তিনটি করে বই দেওয়া হয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অবশ্য সব বই পেয়েছে। যদিও ইংরেজি ভার্সনের কোনো বই এখনো শিক্ষার্থীরা হাতে পায়নি। শুধু এ দুই স্কুল নয়, রাজধানীর অন্তত ১০টি সরকারি-বেসরকারি স্কুলে খোঁজ নিয়ে একই ধরনের তথ্য মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে নামি স্কুল হিসেবে খ্যাত মতিঝিল আইডিয়াল, ভিকারুননিসা নূন, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজও। এমন পরিস্থিতিতে বই ছাড়া খালি হাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন স্কুলে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

শিক্ষকরা বলছেন, তারা প্রতিদিন যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়ম করে যোগাযোগ রাখছেন। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তেমন কোনো সুখবর নেই বলে জানানো হয়েছে তাদের। তারপরে হয়তো পর্যায়ক্রমে পাঠ্যবই স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার কাজে গতি আসতে পারে বলে জেনেছেন তারা। তবে সন্তান হাতে নতুন পাঠ্যবই না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অধিকাংশ অভিভাবক। কেউ কেউ অবশ্য দেশের পট-পরিবর্তনের কারণে বই পেতে দেরি হওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে তুলনামূলক ‘কম অসন্তুষ্টি’র কথা জানিয়েছেন।

এবার বছরের শুরুতে মাত্র ৬ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত বই ছাড় করা হয়েছে ৮ কোটির কিছু বেশি। সেই হিসাবে এখনো ৩২ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে হবে। বই দিতে না পারায় সরকার এবার ১ জানুয়ারি পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করে। সে অনুষ্ঠানে সরকারের কর্মকর্তারা শিক্ষক-অভিভাবকদের পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের পড়াতে অনুরোধ করেন। সঙ্গে জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বই না পাওয়ায় বাবা-মা বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের বইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে দিচ্ছেন। তবে এতে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় অধিকাংশ বাবা-মা প্রিন্ট না দিয়ে নিজেদের মোবাইল ফোনে সন্তানকে বই ডাউনলোড করে দিচ্ছেন। ফলে বই পড়তে শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণ হাতে মোবাইল পাচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, বই পড়তে মোবাইল ফোন হাতে দেওয়ায় তাদের সন্তানরা মোবাইল গেম ও ফেসবুকের রিলস ভিডিও দেখায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে তাদের দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আরিফুর রহমান। তার বাবা সোহাগ হোসেন বলেন, ‘ছেলের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত- সারাক্ষণ ওর হাতে মোবাইল। বই পড়ার কথা বলে মোবাইল ফোন নিলেও মূলত রিলস ভিডিও দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছে। খেতেও বসছে না, বাইরে খেলতেও যাচ্ছে না। বাজে অভ্যাসে অভ্যস্ত হচ্ছে।’

গত সপ্তাহে বই বিতরণে তেমন অগ্রগতি নেই। ১ জানুয়ারি এনসিটিবি বলেছিল প্রায় ৬ কোটি বই তারা ছাড়পত্র দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছে। মাঝে ৭ দিন পার হলেও বই ছাড় করার হিসাবে তেমন পার্থক্য নেই। এনসিটিবি কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৮ কোটি বই এ পর্যন্ত ছাড় করা হয়েছে। তবে ছাপাখানার মালিকরা বলছেন, সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি বই স্কুলে গেছে। আরও দুই থেকে আড়াই কোটি বই ছাপার কাজ হয়েছে। সেগুলোও শিগগির পাঠানো যাবে। খুব দ্রুত কাজ করলেও বই দিতে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা সময় লেগে যাবে। জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা জানুয়ারির মধ্যেই সব বই দেওয়ার জন্য কাজ করছি। আমাদের তৎপরতায় কোনো ঘাটতি নেই। আর্ট কাট বা মলাটের যে কাগজের সংকট ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।আশা করি, ধারণার চেয়ে আগে বই দিতে পারবো।’

ক্যাম্পাস এর আরও খবর: